আব্রাহামিক ধর্ম অর্থ্যাৎ ইহুদী, খৃষ্টান ও ইসলাম ধর্ম উত্থানের সময় থেকেই সমকামীদের প্রতি খড়গহস্ত। যুগে যুগে সমকামীরা ধর্মের নিরিহ শিকারে পরিণত হয়ে উঠেছিল। ধর্ম কর্তৃক নানা নির্যাতন মুখে বুজে সহ্য করতে হয়েছে যৌন সংখ্যালঘু এই জনগোষ্ঠিকে। কিন্তু গত শতাব্দি থেকে যৌন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠির মানবাধীকার নিয়েও মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরী হতে থাকে। বৈজ্ঞানীক গবেষণাগুলোর মাধ্যমে সমকামী জনগোষ্ঠির প্রতি প্রচলিত কুসংস্কার গুলো দূর হতে শুরু করেছে। যার ফলে সভ্য সমাজগুলো আজ সমকামী ব্যক্তিদের মাানবাধীকার রক্ষার ক্ষেত্রে সচেতন হয়ে উঠেছে। জ্ঞান বিজ্ঞানে অগ্রসর হওয়ার কারণে ইহুদী,খৃষ্টান এবং বর্তমানে হিন্দু ধর্ম কিছুটা নমনীয় মনোভাব পোষণ করতে শুরু করলেও ইসলাম ধর্ম হিংস্রতার দিকে আরও এগিয়ে যাচ্ছে।
খৃষ্টান, ইহুদী ও হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ট রাষ্ট্রগুলো সমকামীদের বৈধতা এবং অধিকার সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতন হলে বিপরীত দিকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট রাষ্ট্রগুলো সমকামীদের বৈধতা দানে চরম বিরোধী হয়ে দাড়িয়েছে। সমকামীদের নিয়ে বিভিন্ন খবরে ও সচেতনমূলক পোষ্টে মুসলিমদের বিদ্বেষমূলক, হিংস্র ও অযৌক্তিক মন্তব্য লক্ষ্য করলে মুসলিমদের স্বরুপ জানা যায়। কিন্তু তারা কি সমকামীদের নিয়ে সমালোচনার নৈতিক অধিকার রাখে?
একজন সমকামী কি কোন বিসমকামীকে জোর করে সমকামী বানাচ্ছে? বিসমকামী যৌনতায় বাধা দিচ্ছে? কাউকে কি ধর্ষণ করতেছে? প্রকাশ্যে জনসম্মুখে যৌন কার্য করতেছে? না, এসবের কিছুই করেনি। দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি নিজেদের সম্মতিতে যৌন কার্য করলে তাতে বাধা দেয়ার অধিকার ইসলাম ধর্মকে কে দিয়েছে? একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি নিজের জীবন সঙ্গি হিসেবে কাকে বেছে নিবে সেটা ঠিক করে দেয়ার জন্য ধর্মকে কে অধিকার দিয়েছে? একজন ব্যক্তি নিজের বিছানায় অন্য একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির সম্মতিতে যাই করুক তার জন্য তাকে পাথর ছুড়ে,আগুনে পুড়িয়ে, ফাঁসি দিয়ে মারার বিধান দেয়ার জন্য ধর্ম কে? একজন ব্যক্তি সমলিঙ্গের কাউকে ভালবাসলে, চুমু খেলে বা যৌন কার্য করলে অন্যদের তাতে কোন ক্ষতি আছে কি?
হয়ত কেউ বলবেন সামাজিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতা হ্রাস পাবে। দুজন মানুষের ভালবাসা এবং প্রণয়কে যে সব ধর্ম ও সমাজ অনৈতিকতা হিসেবে চিহ্নত করে সেই সমস্থ্য ধর্ম ও সমাজের এই রকম সংকীর্ণ চিন্তাধারাকে আমরা ঘৃণা করি। যে ধর্ম নারী নির্যাতন,শিশুকামীতা,দাস প্রথা,দাসী সেক্স,বহুবিবাহ,লুটতারাজ, অন্য মতাদর্শের মানুষকে নির্বিচারে গণহত্যা, বিদ্বেষ মূলক বক্তব্য কে সমর্থন জোগায় সেই ধর্ম সমকামীদের নিয়ে সমালোচনার নৈতিক যোগ্যতা রাখে না। আর ইসলাম এইসব মানবতাবিরোধী কাজকে পূণ্য মনে করে। ইসলাম আজকের সভ্যতায় সবচেয়ে নিখৃষ্ট মানবতাহীন একটি ধর্ম। এর কিছু উদাহরণ কোরআন হাদিস থেকে তুলে ধরছি। ইসলাম পৃথিবীতে এসেছিল যুদ্ধ করার জন্য এবং অন্য মতের মানুষদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য।
গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ২/ ঈমান (كتاب الإيمان)
হাদিস নম্বরঃ ২৪
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ আল-মুসনাদী (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আমি লোকদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার জন্য আদিষ্ট হয়েছে, যতক্ষন না তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্র রাসূল, আর সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করে ও যাকাত দেয়। তারা যদি এ কাজগুলো করে, তবে আমার পক্ষ থেকে তাদের জান ও মালের ব্যাপারে নিরাপত্তা লাভ করল; অবশ্য ইসলামের বিধান অনুযায়ী যদি কোন কারন থাকে, তাহলে স্বতন্ত্র কথা। আর তাদের হিসাবের ভার আল্লাহ্র ওপর ন্যাস্ত।
অমুসলিমের সাথে বন্ধুত্ব না করার জন্য কোরআনে হুকুম দেয়া হয়েছে।لَا یَتَّخِذِ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ الۡکٰفِرِیۡنَ اَوۡلِیَآءَ مِنۡ دُوۡنِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ۚ وَ مَنۡ یَّفۡعَلۡ ذٰلِکَ فَلَیۡسَ مِنَ اللّٰہِ فِیۡ شَیۡءٍ اِلَّاۤ اَنۡ تَتَّقُوۡا مِنۡہُمۡ تُقٰىۃً ؕ وَ یُحَذِّرُکُمُ اللّٰہُ نَفۡسَہٗ ؕ وَ اِلَی اللّٰہِ الۡمَصِیۡرُ ﴿۲۸﴾
মুমিনরা যেন মুমিনদের ছাড়া কাফিরদেরকে বন্ধু না বানায়। আর যে কেউ এরূপ করবে, আল্লাহর সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। তবে যদি তাদের পক্ষ থেকে তোমাদের কোন ভয়ের আশঙ্কা থাকে। আর আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর নিজের ব্যাপারে সতর্ক করছেন এবং আল্লাহর নিকটই প্রত্যাবর্তন।(৩/২৮)।
এবার কোরআন ভিন্ন মতে মানুষের কি ভাবে দেখে কোরআন থেকেই দেখুন:-مَنۡ کَانَ عَدُوًّا لِّلّٰہِ وَ مَلٰٓئِکَتِہٖ وَ رُسُلِہٖ وَ جِبۡرِیۡلَ وَ مِیۡکٰىلَ فَاِنَّ اللّٰہَ عَدُوٌّ لِّلۡکٰفِرِیۡنَ ﴿۹۸﴾
‘যে শত্রূ হবে আল্লাহর, তাঁর ফেরেশতাদের, তাঁর রাসূলগণের, জিবরীলের ও মীকাঈলের তবে নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদের শত্রূ ’।(২/৯৮)
দ্বিতীয় খন্ডের জন্য চোখ রাখুন।
তাসনুভা ফেরদৌসী