অন্যান্যএলজিবিটিধর্মীয় ভাবনাবাংলাদেশ

Unseen Wounds always left Uncured

বয়স আমার যখন ১০ কি ১১, আর বাসায় হুজুর পড়াতে আসতেন, হাজার বার বলেও মাকে বোঝাতে পারতাম না হুজুরের কি আচরণ ছিল, সব কিছু ভাষায় প্রকাশ ও করতে পারতাম না, রাগে দুঃখে গলা ভারি হয়ে একসময় গলার আওয়াজ রুদ্ধ হয়ে যেত।
আসলে আমার কোনো কথা অনেক আগে থেকেই বিশ্বাস করতেন না, কারণ আমি যে কাউকে নিয়েই এ জাতীয় কথা বলতে থাকতাম। বাসায় বেড়াতে আশা আত্মীয়দের নিয়ে, গৃহশিক্ষক নিয়ে, ডাক্তার নিয়ে, স্কুল টিচারদের নিয়ে,কাজের লোক নিয়ে – উফ্ফ !!! অনেক যন্ত্রনা দিয়েছি।

সেই সময়টিতে মোবাইল ফোন ছিল না, ভিডিও করার কোনো সুযোগ ও ছিল না। আমার ধার্মিক নামাজী বর্তমানে হাজী মা কখনো হুজুরের মতো সম্মানিত ব্যাক্তি নিয়ে অশোভন এবং অসম্মানজনক কিছু শুনতেই চাইতেন না। হুজুর কেন খারাপ হবে, আমি ই পড়ালেখায় ফাঁকি দিতে চাইছি বলে আমার মায়ের চোখে আল্লা রাসূলের পাঠ পড়ানো পৃথিবীর সর্বোচ্চ সম্মানিত ব্যক্তি কে নিয়ে তার আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলছি। আমার মতো নিকৃষ্ট সন্তান হতে পারে না। আমি তো হুজুর আসলে লুকিয়ে যাবোই, কিছুতেই পড়বো না তার কাছে। একসময় মা বিরক্ত হয়ে এই হুজুর বাদ দিয়ে নতুন হুজুর নিয়ে আসতেন।

প্রতিটি নতুন হুজুরের শুরুটা এমন থাকতো – আলিফ বা তা সা – না, আলিফ বে তে সে হবে। আগের হুজুর যা শিখিয়েছে সব ভুল শিখিয়েছে। এবং ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই হুজুরের ও একই রকম আচরণ, জ্বর দেখার নাম করে গলায় আর ঘাড় হাতানো, সেদিকে হাত বাড়াতে বাড়াতে স্তনে আঙ্গুল দিয়ে জোরে চেপে দেয়া, এমন ভাবে যে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাথায় চোখ দিয়ে পানি পরে যেত। সাথে সাথে হুজুর আমার মাথায় পিঠে মমতার হাত বুলাতো । দিনের পর দিন বিষন্ন চুপচাপ , রাতের পর রাত মুখ চেপে কান্না। এর সবই কারণ হুজুর আসলে আমি একটি লক্ষি মেয়ের মতো পড়তে না বসার জন্যে। এসব দেখলে তো আমাকে কোরান আর ইসলাম শিক্ষা দেয়া যাবে না। বহুবার মাকে বলেছি মা তুমি পর্দার আড়ালে একবার দাঁড়িয়ে দেখো হুজুর কিভাবে ব্যথা দেয়া আমাকে। বহুদিন পর্যন্ত মা মাথায় হাত বুলানো আর চোখে পানি দেখেছে, এর আগে কি হয়েছে তা দেখেনি। মাসের পর মাস গড়ানোর পর একদিন আমার ভাগ্য প্রসন্ন হলো, মা হাত বুলানোর আগের সিন্ নিজের চোখে দেখলো।
তারপর মা এই হুজুরের কাছে আমাকে পোড়ানো বন্ধ করে দিলো কিন্তু আমার ছোট ভাই কে সেই একই হুজুর কে দিয়ে পড়ানো অব্যাহত রাখলো।